উখিযা নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চু্ক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মিয়ানমার তাদের দেওয়া কথা অনুযায়ী কাজ করে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু বাস্তবতা হলো মিয়ানমার যা বলে তা করে না।’
চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর রোববার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক জাহিদ নেওয়াজ খানের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এরইমধ্যে তিন হাজার জনের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তারা প্রস্তুত আছে।’
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যেন ভালো থাকে, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে এ ধরনের আঞ্চলিক গোষ্ঠী তৈরি হয়। এখানে আলোচনার জন্য ভালো পরিবেশ ছিল। রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও বাকি সময় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি। বঙ্গপোসাগরকে ঘিরে যে দেশগুলো, তাদের যে উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। এই দেশগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা নেপাল-ভুটানের জলবিদ্যুৎ যৌথ উদ্যোগে ব্যবহার করতে পারি। সোলার পাওয়ার নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগের কথা বলেছেন। থাইল্যান্ড থেকে শুরু করে আমরা যদি হিসাব করি তাহলে দীর্ঘ সময় আমরা আলো পাই। সেই অনুযায়ী যদি সোলার প্যানেল বসানো যায় এবং যৌথভাবে আমরা সেই সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারি সেই বিষয়ে কথা হয়েছে।’
গত ৩১ আগস্ট নেপালে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে চতুর্থ বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক)’র চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সফরকালে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি চতুর্থ বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশন এবং শুক্রবার সকালে সমাপনী অধিবেশনসহ সম্মেলনের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন। বিমসটেকভুক্ত অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সম্মেলনে যোগ দেন ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যও রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায় চতুর্থ বিমসটেক সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশন শুরু হয়। নেপালের জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনের মধ্যে শুরু হয় সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভুটানের অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাসো শেরিং ওয়াংচুক, শ্রীলংকান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রিয়ুথ চ্যান-ও-চার, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেন।
কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় বিকালে সাতটি দেশের আঞ্চলিক এই জোটের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিমসটেক সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। শুক্রবার সকালে বিমসটেকের সমাপনী অনুষ্ঠানসহ রিট্রিট সেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। একটি যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবারের শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।
এই উপ-আঞ্চলিক সংস্থাটি ১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে গঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ৫টি দক্ষিণ এশিয়ার। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা। অন্য দুটি দেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড। বিশ্বায়নের আগ্রাসন মোকাবেলা করে আঞ্চলিক সম্পদ এবং ভৌগোলিক সুবিধাদি কাজে লাগিয়ে সবার স্বার্থে পারষ্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে এই ধরনের জোট গঠনের উদ্দেশ্য।
পাঠকের মতামত